,

‘দুর্গাপূজায় মণ্ডপে ২৪ ঘণ্টা থাকবে আনসার’

নিজস্ব প্রতিবেদক: অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে দুর্গাপূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই আনসার সদস্যদের রাখা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

সচিবালয়ে রোববার দুর্গাপূজা উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘গতবার আমরা কোভিডের জন্য ভ্রাম্যমাণ পুলিশ রেখেছিলাম। এবার সব মণ্ডপেই আমরা…বিশেষ করে আনসার স্থায়ীভাবে থাকবে। তারা (মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ) থাকার ব্যবস্থা করে দেবেন। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি, এবার গতবারের চেয়ে মণ্ডপের সংখ্যা বেশি। আমরা বিস্তারিত আলোচনা করে কতগুলো সিদ্ধান্তে এসেছি।

‘পয়লা অক্টোবর থেকে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত সারা দেশে শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এবার ৩২ হাজার ১৬৮ মণ্ডপে পূজা হবে। আমি অনুরোধ করেছি এটা যাতে আর বৃদ্ধি না পায়, বরং যদি কমে, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা। এটা দুই-একটি কমতে বা বাড়তে পারে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এসব মণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক নিরাপত্তা (আইনশৃঙ্খলা) বাহিনী, এটা পুলিশ হতে পারে, আনসার হতে পারে, যেখানে যেটা প্রয়োজন, সেভাবে ব্যবস্থা করা হবে। মণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বেচ্ছাসেবক রাখা হবে। তাদের যেন আর্মড ব্যান্ড থাকে, এটা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, যাতে করে আমরা বুঝতে পারি কারা স্বেচ্ছাসেবক। বড় মণ্ডপে নিরাপত্তা বাহিনী টহলে থাকবে।

‘মণ্ডপে আসা নারী ও শিশুদের ইভটিজিং ও মাদক সেবন রোধে বা যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে মণ্ডপ কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নেবে। যেকোনো ইমার্জেন্সিতে ৯৯৯-এ ফোন করতে বলা হয়েছে। প্রতি মণ্ডপে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা পথ রাখতে হবে। এটাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আজান-নামাজের সময় মসজিদের পার্শ্ববর্তী পূজামণ্ডপগুলোতে পূজা চলাকালীন এবং বিসর্জনের সময় শব্দযন্ত্রের ব্যবহার সীমিত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। পূজামণ্ডপে জুয়া ও মাদক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

‘দুষ্কৃতিকারীদের অশুভ তৎপরতা রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সক্রিয় থাকবে। মণ্ডপে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য আলোচনা করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার গুজব রোধে এগুলো মনিটরিং করা হবে। কেউ এ ধরনের অপচেষ্টা করলে কঠোর অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে বলে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। গতবারও ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা মানা হয়নি।’

গত বছর শারদীয় দুর্গোৎসবে কুমিল্লায় যে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছিল, সরকারের নির্দেশনা মানলে তা হতো না বলে মন্তব্য করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

গত বছরের অক্টোবরে দুর্গাপূজায় সারা দেশে উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন শরিফ পাওয়ার পর ছড়িয়ে পড়ে সহিংসতা।

নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই মণ্ডপে চলে ব্যাপক ভাঙচুর, আক্রান্ত হয় নগরীর আরও বেশ কিছু পূজামণ্ডপ। পরে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে চাঁদপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায়।

কামাল বলেন, ‘আজকে মিটিংটা সে কারণেই। বাংলাদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এখানে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খ্রিস্টান সবাই মিলেই এ দেশ। আমরা মনে করি বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের সেই দেশে কেউ পূজা করতে পারবে না, বড়দিন করতে পারবে না, বৌদ্ধ পূর্ণিমা হবে না কিংবা মুসলমানদের ধর্মকর্মে কেউ বাধা দেবে, এটা হতে দেয়া হবে না। সবাই যার যার ধর্ম পালন করবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর যে উক্তি, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’, বাংলাদেশে সেটাই চলে আসছে। হাজার বছরের সংস্কৃতি এটাই। পূজামণ্ডপে আমরা সবাই যাই, ঈদের সময়েও তারা আসে আমাদের বাসায়। এই সম্প্রীতি যেন অটুট থাকে সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক পূজামণ্ডপে আমরা কম্পলসারি (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছি যে, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকতেই হবে। আমরা বলেছি, তারা যেন নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখে। কুমিল্লার ঘটনা দেখেছেন। রাত ২টার পর ঘটিয়েছে এক মধ্যবয়সী ছেলে। সে ইচ্ছে করে কুরআন নিয়ে সেখানে স্থাপন করেছে।

‘এ ধরনের ঘটনা যদি সেখানে স্বেচ্ছাসেবক থাকত, তাহলে এটা হতো না বলে আমি মনে করি। দুয়েকজন দুষ্কৃতিকারীর জন্য সবাইকে ইয়ে মনে করি না। সবাই শান্তিপ্রিয় মানুষ। দুই-একজন এ রকম সারা পৃথিবীতেই থাকে অঘটন ঘটানোর জন্য।’

এ বছর এ ধরনের কোনো তৎপরতার তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার কাছে নেই বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা গতবারও ব্যবস্থা নিয়েছিলাম, কিন্তু আমাদের কথা মানা হয়নি। একজন স্বেচ্ছাসেবক রেখেছিলেন। তিনি অনেক দূরে গিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন।

‘বিভিন্ন জায়গায় ক্যামেরা দিয়ে পরে আমরা বের করেছি। মণ্ডপে ক্যামেরা থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে ধরা যেত।’

এই বিভাগের আরও খবর